ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের প্রতি আসক্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ অংশ নিয়মিত ধূমপান করেন। ধূমপানের বিস্তারে ক্যাম্পাসে চাঙ্গা হচ্ছে সিগারেটের বাজার। প্রতি মাসে গড়ে ২৮ লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হচ্ছে ক্যাম্পাসে।
সে হিসাবে দিনে ধূমপানের পেছনে শিক্ষার্থীদের ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা। সিগারেটের ক্ষতিকর নিকোটিনের প্রভাবে ক্যান্সারসহ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও পড়ছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্ররা ধূমপানে বেশি আসক্ত। তবে সম্প্রতি ছাত্রীদেরও একটি অংশ ধূমপানে জড়িয়ে পড়ছেন।নতুন ব্যাচ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ধূমপান থেকে অন্যান্য মাদকে আসক্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছাত্রদের অর্ধেকই ধূমপানের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ ছাত্র নিয়মিত ধূমপান করেন।
ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও আবাসিক এলাকার দোকানগুলো থেকে সিগারেট সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে দুটি কম্পানির প্রতিনিধিরা এসে এসব সিগারেট সরবরাহ করেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানি ছয় ব্র্যান্ডের ১৪ ধরনের এবং জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল তিন ব্র্যান্ডের সাত ধরনের সিগারেট বিক্রি করে থাকে ক্যাম্পাসে।
ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানির বিপণন কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম ও জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল কম্পানির বিপণন কর্মকর্তা মো. মনির জানান, দুই কম্পানি ক্যাম্পাসের ২২টি দোকানে প্রতি মাসে গড়ে ২৪ লাখ টাকার সিগারেট সরবরাহ করে, যার খুচরা বিক্রয়মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা। স্বাভাবিক দিনগুলোতে গড়ে পৌনে এক লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়।
বিশেষ দিনে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সিগারেট বিক্রি হয়। প্রতি মাসে গড়ে আড়াই লাখ শলাকা সিগারেট সরবরাহ করে কম্পানি দুটি। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে বিক্রির পরিমাণ। ক্যাম্পাসের মুদি দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুদি দোকানগুলোতে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় সিগারেট বেশি বিক্রি হয়। এসব দোকানে দৈনিক মোট বিক্রির ৫৫-৬০ শতাংশই আসে সিগারেট থেকে।
জিয়া মোড়ের মুদি দোকানি রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে আট হাজার টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। অন্য সব পণ্য মিলে বিক্রি হয় পাঁচ হাজার টাকার মতো। এর মধ্যে খাবার পণ্য বিক্রি হয় সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় হাজার টাকার। এক বা দুই বছর আগের তুলনায় এখন দুই থেকে তিন গুণ বিক্রি বেড়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ধূমপান শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি অপরাধপ্রবণ করে তোলে।’
উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা আগামীতে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে ধূমপানকেও যুক্ত করব। তবে সবচেয়ে কষ্ট লাগে, যখন শুনি শিক্ষকরাও ধূমপান করেন।