ঋণের টাকা পরিশোধ করে ১ মণ দুধ দিয়ে গোসল
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় গরু বিক্রি করে এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেয়ে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবক।দুধ দিয়ে গোসল সেরে তিনি শপথ করেছেন- ‘জীবনে আর কোনো দিন সমিতি বা এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করবেন না। ’ দুধ দিয়ে গোসল করার ঘটনাটি ২৬ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার জাঙ্গালিয়াকান্দা গ্রামে ঘটে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
শহিদুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রির কাজ করে তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার শহিদুলের। প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন শহিদুল ইসলাম। ওই ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সংসারের টানাটানিতে তিনি তা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছিলেন না। ফলে তিনি ওই এনজিও কর্মকর্তাদের চাপের মুখে পড়ে ইতোমধ্যে ঘরের সব হাঁস-মুরগি বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন।
এদিকে তার রাজমিস্ত্রির নিয়মিত কাজ না থাকায় তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এতে ঋণের কিস্তির চাপে তার কাজকর্মেও মন বসছিল না। অনেকটা অসহায় হয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সবশেষ সিদ্ধান্ত নেন, তার একমাত্র ষাঁড় গরুটি বিক্রি করে দেওয়ার। এরপর ঋণ শোধ করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুধ দিয়ে গোসল করে জীবনে কোনো দিন ঋণ বা সুদে টাকা ধার না নেওয়ার শপথ করেন।
জানা যায়, গত ২৪ জুলাই স্থানীয় হাবিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শহিদুল গরু বিক্রি ও এর নেপথ্যের কারণ জানান। ওই ব্যক্তি শহিদুল ও তার গরুর ছবি দিয়ে বিষয়টি তার ফেসবুকে পোস্ট দেন। স্ট্যাটাসে শহিদুল ২৫ জুলাই বিকেলে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল মাঠে দুধ দিয়ে গোসল করবেন বলে জানান। পরে মঙ্গলবার শহিদুল ইসলামের বাড়িতে আশপাশের এলাকার মানুষ তাকে দেখতে ভিড় করেন। পরে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে উপস্থিত সবার সামনে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করেন শহিদুল।এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি এনজিও থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আমি গরিব মানুষ। ঠিকমতো কিস্তি দিতে পারি না। রাজমিস্ত্রির কাজ করি, একদিন কাজ থাকলেও আরেক দিন কাজ থাকে না। তখন বসে থাকতে হয়। ওদের কিস্তির চাপে পড়ে শেষ সম্বল গরুটি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করলাম। দুধ দিয়ে গোসল করে শপথ নিলাম, জীবনে আর কখনও কোনো জায়গা থেকেইর ঋণ বা সুদে টাকা নেব না।