চিঠি জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ৩৫ লাখ টাকায় বাবার নামে এতিমখানা
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অসম্মতি জানানোর পর চিঠি থেকে ‘অ’ মুছে দিয়ে তাকে সম্মতি হিসেবে উপস্থাপন করে জেলা পরিষদের ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের নামে এতিমখানা খোলার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক ও বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে গত রবিবার বিভাগীয় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনর খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ আসাদুজ্জামান।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ষাটলিপিকার হিসেবে যোগদান করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাটিয়াডাঙার এসএম মাহাবুবর রহমান। স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) কর্মকর্তা চাকুরি বিধিমালা, ১৯৯০ এর ৭ ধারা অনুযায়ি জেলা পরিষদের অর্গানোগ্রামের ৯নং ক্রমিকের কর্মচারি স্নাতক পাশ না হয়েও এসএম মাহবুবর রহমানকে বিধি বহির্ভুতভাবে অর্গানোগ্রামের ৩ নং ক্রমিকে প্রশাসনিক অফিসার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন মÐল জানান, ধুলিহরের মুক্তিযোদ্ধা স.ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও একাডেমিক ভবন নির্মাণে অনয়িম হয়েছে জানতে পেরে তিনি তথ্য অধিকার আইনে কাগজপত্র আহবান করেন। কাগজপত্র পাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন যে, ২০১৫ সালের ১২ জুলাই সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের এক সমন্বয় কমিটির সভায় ধুলিহরে মুক্তিযোদ্ধা স.ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমাখানার একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৫ লাখ টাকা খরচ অনুমোদন চেয়ে পরদিন স্থানীয় সরকার , পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এই বছরের ২৮ জুলাই ওই মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ট সহকারি সচিব জাকির হোসেন সাক্ষরিত চিঠিতে এতিমখানার প্রক্কলন খরচ কত, এর আগে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সেই অর্থে কি কি কাজ করা হয়েছে এবং এতিমখানায় কত জন এতিম বা অনাথ রয়েছে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি চিঠিতে স.ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে ও এতিমখানা প্রকল্পের প্রস্তাবে অসম্মতি জানানো হয়। তবে পরে ‘অ’ শব্দটি মুছে ফেলে ‘সম্মতি’ লিখে বিকৃত করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অসম্মতি জানানোর পর চিঠি থেকে ‘অ’ মুছে দিয়ে তাকে সম্মতি হিসেবে উপস্থাপন করে জেলা পরিষদের ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের নামে কমপ্লেক্স ও এতিমখানার ভবন নির্মাণ করা হয়।
এ ঘটনায় এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল স্থানীয় সরকার , পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। ওই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তানভির ছিদ্দিকী সাক্ষরিত এক চিঠিতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) সাতক্ষীরায় এসে তদন্ত করেন। এতে সাক্ষ্য দেন তিনি ( সত্যরঞ্জন মÐল) । তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৬ সালের ৬ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি চিঠিতে স.ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার একাডেমিক ভবন প্রকল্পের প্রস্তাবে অসম্মতি জানানো হয়। তবে পরে ‘অ’ শব্দটি মুছে ফেলে সমবমাত লিখে বিকৃত করা হয়। খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশানর (সার্বিক) তদন্ত করে এই অভিযোগের সত্যতা পান।
গত ৭ সেপ্টম্বর স্থানীয় সরকার , পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থ্নাীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখার উপসচিব তানভির ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে খুলনা জেলা পরিষদকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুববর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর রবিবার খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুববর রহমানের বিরুদ্ধে তিনি বাদি হয়ে বিভাগীয় মামলা করেন। এর কিছু প্রক্রিয়া আছে । তার পর শুনানী হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে এস.এম মাহাবুবর রহমানের মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।