বাংলাদেশ

দেশের দুই জেলায় ৫ ভোটকেন্দ্রে আগুন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামীকাল রবিবার। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। তবে শেষ দিনেও সংঘাত থেমে ছিল না। খুলনায় নির্বাচনী ক্যাম্প পাহারারত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা।

রাজশাহীর তিন উপজেলার চারটি ও ফেনীর সোনাগাজীতে একটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্বাচনী ক্যাম্প ও ফরিদপুরের সালথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়ার এক সমর্থকের বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তৎপর ছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তারা ভোটগ্রহণের আগের দিন আজ ও আগামীকাল ভোটগ্রহণের দিনও সারা দেশে হরতাল ডেকেছে।

খুলনা : খুলনায় নির্বাচনী ক্যাম্প পাহারারত অবস্থায় হাসান ফারাজী (৩০) নামের এক কর্মীর শরীরে কেরোসিন দিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। হাসান খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী থানা) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম কামালের প্রচারণা ক্যাম্প পাহারা দিচ্ছিলেন। তিনি যোগীপোলের সোহরাব ফারাজির ছেলে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে খানজাহান আলী থানা এলাকার যোগীপোলে এ ঘটনা ঘটে।হাসান ফারাজীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ভুক্তভোগীর স্বজন ও পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে দুই-তিনজন দুর্বৃত্ত হাসানের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। তাঁকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে।

রাজশাহী ও বাঘা : রাজশাহীর তিন উপজেলার চারটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাঘা, বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এসব ঘটনা ঘটে।এর মধ্যে বাগমারার ভোটকেন্দ্রটি থেকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ।বাঘার একটি ভোটকেন্দ্রে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। অন্য তিনটি কেন্দ্রে  দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

স্কুল চারটি হলো বাঘা উপজেলার জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়ানী ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনপুরের মতিহার উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাগমারার আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয়।বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লেঅকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ভোটকেন্দ্রের সামনে দুটি অবিস্ফোরিত তাজা ককটেল পাওয়া গেছে।বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের পরিত্যক্ত ভবনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোন স্কুলে কিভাবে আগুন লেগেছে তার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নাটোর : নাটোর-৪ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভনের একটি নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার ভোরে বনপাড়া পৌরসভার ৭ নন্বর ওয়ার্ডের হারোয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, গতকাল ভোরে নির্বাচনী ক্যাম্পটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ক্যাম্পের শামিয়ানাসহ টেবিল-চেয়ার পুড়ে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে কানসাট শিকারপুর গ্রামের ওই অফিসে আগুন দেওয়া হয় বলে  অভিযোগ করেছেন ওই অফিস পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম। নৌকার প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি বলেন, ঘটনাটি পুলিশ ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে অভিযোগ আকারে জানানো হয়েছে।

সোনাগাজী (ফেনী) : সোনাগাজীতে গতকাল ভোরে একটি ভোটকেন্দ্রে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী আবুল কালাম আজাদ ও দপ্তরী আবু বক্কর ছিদ্দিককে আটক করেছে।সোনাগাজী উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা জামিল আহমেদ বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ সময় পেট্রলসহ একটি বোতল জব্দ করা হয়েছে।

ফরিদপুর : সালথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়ার (ঈগল) এক সমর্থকের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষণদিয়া পশ্চিমপাড়া চণ্ডীর ভিটা এলাকার আওয়াল মাতুব্বরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

আওয়াল মাতুব্বর বলেন, ‘আমার এক ছেলে প্রবাসী এবং এক ছেলে অনার্সে পড়ে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার সুবাদে আমরা ফরিদপুরে থাকি। প্রবাস থেকে আমার ছেলে বাড়িতে এসেছে। নির্বাচনে তারা দুজনই ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. জামাল হোসেন মিয়ার পক্ষে কাজ করছে। নির্বাচনে ক্যাম্পিং করার সময় লাবলু চেয়ারম্যানের ভাই আবুল হোসেন ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে মারধর করার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে আমার ছেলেদের এলাকাছাড়া করে। এরপর আমি রাত সাড়ে ৩টার দিকে খবর পাই আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসে দেখি বিদ্যুতের তার খুলে রেখে পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলে প্রবাসে থাকে, আমরা মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে থাকি। বাড়িতে সব মালামাল ছিল।’সালথা থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

Back to top button