আন্তর্জাতিক

প্রসাদ চুরির অভিযোগে প্রতিবন্ধী যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে মন্দিরের প্রসাদ চুরির অভিযোগে এক প্রতিবন্ধী মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই যুবককে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে কয়েকজন মিলে পেটায়। এক পর্যায়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। খোদ রাজধানীতে এমন নির্মম হত্যার ঘটনা বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন মতে, গত মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরপূর্বাঞ্চলের নন্দ নগরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। গণেশের প্রসাদ চুরি অভিযোগে ২৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী যুবক ইসরার আহমেদকে একটি খুঁটিতে বাঁধেন কয়েকজন। এরপর তাকে লাঠি নিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন।

ওই মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, এক যুবক খুঁটির সাথে বাঁধা। আর কয়েকজন যুবক তাকে পেটাচ্ছেন। মারের চোটে চিৎকার করছেন ওই যুবক। কাতর আবেদন করছেন, তাকে যেন ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কেউ সেই আকুতিতে কান দিচ্ছেন না কেউ। বরং মারধর আরও বাড়তেই থাকে।
ইসরার আহমেদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্য মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ইসরারের বাবা আব্দুল ওয়াজিদ পুলিশকে জানান, তার ছেলের মানসিক কিছু সমস্যা রয়েছে। এলাকার কিছু মানুষ তাকে মরণাপন্ন অবস্থায় এক প্রতিবেশীর বাড়িতে পৌঁছে দেন।

ছেলের মুখেই পুরো ঘটনার কথা শোনেন পেশায় ফলবিক্রেতা ওয়াজিদ। তিনি আরও জানান, ছেলের সারা শরীরে মারধরের গভীর ক্ষত ছিল। বাড়িতে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগই আর পাননি তারা।

ইসরার আহমেদের পরিবার বলছে, গণেশের প্রসাদ চুরির অভিযোগে ইসরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে উত্তর পূর্ব দিল্লির পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জয় তিরকে বলেছেন, ‘এটি কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়’। পুলিশ বলছে, ‘ওরা (হত্যাকারীরা) দেখে, তিনি (ইসরার) ঘুরঘুর করছেন আশপাশে। ফলে তাকে চোর সন্দেহ করে তারা। তারপর তাকে বেঁধে মারধর করা হয়েছে।’

এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন মতে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন কামাল বলে এক ব্যক্তি। যিনি ওই এলাকায় ডিজের ব্যবসা চালান। গ্রেফতার করা হয়েছে কামালের ভাই ইউনিসকেও।
এছাড়াও মনোজ নামে এলাকার পেশায় দরজি এক যুবককে, পেশায় শ্রমিক কিষেণ ও  কারখানার কর্মচারি পাপ্পু-এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া লাকি নামের এক ব্যক্তি, যার এলাকায় একটি মোমোর দোকান রয়েছে, তাকেও আটক করা হয়েছে। তার বয়স ১৭।

পুলিশ জানিয়েছে, তাদের জেরার মুখে অভিযুক্তরা জানিয়েছে, হত্যার শিকার যুবক ইসরার এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। তখন তাদের সন্দেহ হয়, ইসরার গণেশের প্রসাদ চুরি করবেন। সেই সন্দেহের জেরেই তাকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

জেরার মুখে অভিযুক্তরা আরও জানিয়েছে, ইসরারকে ধরে তারা প্রশ্ন করেছিল, কেন সে ঘোরাফেরা করছে? এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে না পারায় তাকে মারধর করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ইসরার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। কারণ সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিল।

Back to top button