সাতক্ষীরায় সুপেয় পানির সংকট মেটাচ্ছে ‘প্রবাহ’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরায় সুপেয় পানির ব্যাপক সংকট চলছে বহু বছর ধরেই। দুর্যোগ প্রবণ এলাকা সাতক্ষীরায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া প্রায় সময় বেড়ি বাঁধ ভেঙে লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে নষ্ট হয় সুপেয় পানির উৎস। নলকূপের পানিও লবণাক্ত। পাশাপাশি রয়েছে আর্সেনিক। ফলে এখানকার মানুষ দূষিত পানি পানে বাধ্য হয়। এতে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, চর্মরোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ এলাকার মানুষের সুপেয় পানির জন্য সরকারি বে-সরকারিভাবে নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা উপকূলের অসহায়, দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ‘প্রবাহ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এসেছে। বিএটি বাংলাদেশের সিএসআর প্রকল্পের আওতায় প্রবাহ জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ আকাশলীনা ইকো পার্ক ও নীলডুমুর জেলা পরিষদ পুকুরে পৃথক দু’টি আধুনিক প্রযুক্তির সুপেয় পানির প্লান্ট স্থাপন করেছে। প্রতিটি প্লান্ট থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন হচ্ছে।
প্রবাহ প্লান্টে পানি নিতে আসা মুন্সিগঞ্জের জেলে পাড়ার বাসিন্দা আন্ধারী মণ্ডল (৬৫) জাগো নিউজকে বলেন, স্বামী গিরেন্দ্রনাথ মণ্ডল ২০ বছর আগে সুন্দরবনে মধু আহরণে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান। এরপর থেকে একা সরকারি খাস জমিতে বসবাস করছি। চারদিকে অথৈ পানি, কিন্তু কোথাও খাবার পানি নেই। এখানকার টিউবয়েলের পানিও লবণাক্ত। ফলে পুকুর ও বৃষ্টি খাবার পানির উৎস। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বেড়ি বাঁধ ভেঙে পুকুরে লোনা পানিতে ডুবে যায়। তাই বাধ্য হয়েই নোংরা পানি পান করতে হয়। এতে শরীরে বাসা বেঁধেছে ডায়রিয়া, চর্মসহ নানা রোগ।
বুড়িগোয়ালীনী গ্রামের অঞ্জনা রানী (৪০) বলেন, পুকুরের পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ হতো। প্রবাহের প্লান্ট চালুর পর ভালো পানি পাচ্ছি। শিশুরাও এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ আছে।
আকাশলীনা ইকো পার্কের প্রবাহ পানির প্লান্টের ম্যানেজার সাগর সরদার বলেন, কলবাড়ি, চুনা, চন্ডিপুর, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী, ধানখালী, দুর্গাবাটিসহ আশপাশের ১০ গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার প্রতিদিন এ প্লান্ট থেকে পানি সংগ্রহ করে। প্লান্টের এক মেশিন থেকে দিনে এক থেকে পাঁচ হাজার লিটার সুপেয় পানি বিতরণ করা হয়।
নীলডুমুর এলাকার জিয়া হোসেন (৪০) বলেন, জেলা পরিষদের পুকুরে প্রবাহ পানির প্লান্ট উন্নত প্রযুক্তির। এর পানি দামি ব্রান্ডের বোতলজাত পানির মতই। স্থানীয়রা ছাড়াও সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটক, জেলে ও বাওয়ালীরা এখান থেকে পানি নেয়। আমাদের দাবি প্রবাহ উপকূলজুড়ে এ ধরনের আরও একাধিক প্লান্ট স্থাপন করুক।
প্রবাহ কর্মকর্তা অর্পি হাওলাদার জানায়, প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, কালিগঞ্জের নলতা ও শ্যামনগর উপজেলায় আধুনিক রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তির মোট চারটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। বর্তমানে আশাশুনি উপজেলায় আরও দুটি প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। এসব এলাকার মানুষ খুব সহজেই এখন বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন। এসব পানি রান্নার মতো গৃহস্থালীর কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে অনেক পরিবার পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন বলেন, প্রবাহ পরীক্ষামূলকভাবে উপকূল এলাকায় দুটি পানির প্রকল্প স্থাপন করেছে। এলাকার মানুষ তাদের পানি পান করে বেশ উপকৃত হচ্ছে। তাদের পানির মান বেশ ভালো।
তিনি আরও বলেন, শ্যামনগরে খাবার পানির তীব্র সংকট। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ ধরনের প্রকল্প আরও নেওয়া দরকার।