সাতক্ষীরা পৌরসভা সুপেয় পানি সরবরাহে ব্যর্থ, ফের বাড়ালো পানির বিল, নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ
ডেস্ক রিপোর্ট:
সাতক্ষীরা পৌরসভা সরবরাহকৃত পানির বিল বৃদ্ধি বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে না বলে বিবৃতি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।বুধবার সংগঠনের এক সভা শেষে এই বিবৃতি প্রদান করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক
অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১ জুন ২০২৩ থেকে সাতক্ষীরা পৌরসভা সরবরাহকৃত পানির বিল ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়। গ্রাহকদের কাছে এই বর্ধিত বিল পাঠানোর পর গত ১৮ জুন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে সাক্ষাৎ করে পানি সরবরাহ বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন এবং সমস্যা সমাধানের পর গণশুনানির মাধ্যমে বিল বৃদ্ধির বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আহবান জানান।
এছাড়া অনানুষ্ঠিকভাবে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মেয়র, ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে আলোচনা করা হয় এবং স্মারকলিপি দেওয়া হয়।কিন্তু তারপরও কর্তপক্ষ বিষয়টি যথাযথভাবে গুরুত্ব না দেওয়ায় জনগণকে সাথে নিয়ে নাগরিক কমিটি মাঠে নামতে বাধ্য হয় এবং তার পরেই গত ১৭ জুলাই পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বিল বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়।
জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় উত্থাপিত সমস্যাগুলো ছিল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার শত শত গ্রাহক বছরের পর বছর পানি পান না। অনেকে পানি পেলেও তা চাহিদার চেয়ে কম। অনেক এলাকায় সরবরাহকৃত পানি লবণাক্ত, অত্যাধিক আয়রন ও দুর্গন্ধযুক্ত। ফলে সেই পানি পান করাতো দূরের কথা ব্যবহারের উপযোগী নয়। অধিকাংশ গ্রাহকের মিটার না থাকায় অথবা মিাটারগুলো অকেজো থাকায় গড়পততার বিলে কম ব্যবহারকারী গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আলোচনায় আরো উল্লেখ করা হয়, ইতোপূর্বে নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় ৩৭ শহর পানি প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা পৌরসভায় স্থাপিত আর্সেনিক-আয়রনমুক্ত প্লান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। সেই পানি শুধু পৌর এলাকায় নয়, পৌরসভার বাইরেরও শতশত মানুষ পিকআপ-ভ্যান-পরিবহনযোগে নিয়ে যেয়ে পান করতো। সে সময় অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছায় পৌরসভার মোড়ে মোড়ে পাহারা বসিয়ে এবং পুলিশের সহায়তা নিয়ে শহরের বাইরের মানুষের পানি নেওয়া বন্ধ করা হয়। তারপরও চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে আর্সেনিক-আয়রনমুক্ত প্লান্টের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিবর্তে অজ্ঞাত কারণে সেই প্রকল্প অকার্যকর করা হয়। পৌর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী সে সময় পানি সরবরাহ শাখা লাভে ছিল। কিন্তু কেন এবং কার স্বার্থে সেটি ধ্বংস করা হলো তার কোন সদুত্তর কখনো কর্তৃপক্ষ দেননি।
নাগরিক কমিটির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি কেউ পান করতে পারেন না। যাদের সামর্থ আছে তারা জারের পানি কিনে পান করেন। যাদের সামর্থ নেই তারা টিউবওয়েল বসিয়ে সেই পানি পান করেন। কিন্তু নতুন করে টিউবওয়েলের উপরও মাসিক ফি ধার্যের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এরফলে পৌরবাসীর হয়রানি ও নাগরিক দুর্ভোগের মাত্রা বাড়বে এবং সমস্যা বাড়া ছাড়া কমবে না।
একটা কার্যকর নাগরিক সংলাপ বা গণশুনানি না করে এবং পৌরসভার পানির মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় নির্ধারিত কমিটির সভা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিছু লোকজনকে ডেকে নিয়ে ২০০ টাকা বিল পুননির্ধারণের সিদ্ধান্ত পৌরবাসীর পানির দুর্ভোগ কমাতে সহায়ক হবে না।
জেলা নাগরিক কমিটির বিবৃতিতে ২৫ জুলাই পৌরসভার মতবিনিময় সভায় জেলা নাগরিক কমিটি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো এবং পানিসহ পৌরসভার বিরাজমান সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে নাগরিক সংলাপ আহবানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় দাবি জানানো হয়।
বুধবার (২৬ জুলাই) বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল ওয়াহেদ, প্রফেসর ড. দিলারা বেগম, অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, অধ্যাপক কৃষ্ণপদ সরকার, সুধাংশু শেখর সরকার, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মাধব চন্দ্র দত্ত, কমরেড আবুল হোসেন, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, নিত্যানন্দ সরকার, আব্দুর জব্বার, অ্যাড. মুনির উদ্দীন, মুনসুর রহমান, আব্দুস সামাদ, আদিত্য মল্লিক, মফিজুর রহমান, আফজাল হোসেন, জিএম রেজা কিবরিয়া, লুৎফর রহমান, বায়জিদ হোসেন, মোস্তাকিম বিল্লা, আলী নুর খান বাবলু ও অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ।