বিনোদন

সিনেমা বানিয়েছি দেশের মানুষের জন্য: আশুতোষ সুজন

বিনোদন ডেস্ক :

বছর কয়েক আগে একটি বিজ্ঞাপনের দৃশ্যে তরুণ অভিনেত্রী শাহনাজ সুমি সেলুনে গিয়ে তার সুন্দর লম্বা চুল ছোট করতে বলেন। সেলুনের কর্মী তার চুল ছোট করেন।কিন্তু, সুমি বলেন, আরো ছোট করে দেন, যাতে এভাবে আর ধরা না যায়!

নারী নিগ্রহ ও নির্যাতন বিরোধী সেই বিজ্ঞাপনটি বাঙালির চৈতন্যে ব্যাপকভাবে স্পর্শ করেছিল। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের কাঁটাতার ছাড়িয়ে বিজ্ঞাপনটির মূল আহ্বান পৌঁছে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।বিজ্ঞাপনটি নিয়ে বিশেষ লেখা প্রকাশ হয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। বিশ্ব বিবেকে টনক নাড়ানো বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেন আশুতোষ সুজন

নির্মাণের পাশাপাশি যিনি অভিনেতা হিসেবেও পরিচিত। এবার এই নির্মাতা হাজির হতে যাচ্ছেন নতুন সিনেমা ‘দেশান্তর’ নিয়ে। ইতোমধ্যেই সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে এটি। ঘোষণা করা হয়েছে মুক্তির তারিখ। সব ঠিক থাকলে আগামী ১১ নভেম্বর দেশের প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে সিনেমাটি।

এ বিষয়ে নির্মাতা জানান, নাটক, বিজ্ঞাপন নির্মাণ করলেও ‘দেশান্তর’ তার প্রথম সিনেমা। কবি নির্মলেন্দু গুণের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এটি। যেটি পেয়েছে সরকারি অনুদানও।

উপন্যাস নির্ভর সিনেমা নির্মাণ করা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। সেই প্রথম সিনেমায় এমন সাহস দেখানোর প্রসঙ্গে আশুতোষ সুজন বলেন, আমরা স্রোতের বিপরীতের কিছু নই। আসলে বর্তমানে যে ধরনের গল্প বলা হচ্ছে সেখান থেকে একটু ভিন্ন গল্প বলার চেষ্টা করেছি ‘দেশান্তর’-এ। যে দেখবে গল্পে কিছু না কিছু পাবে। মূলত এটা দেশভাগের গল্প, দেশপ্রেমের গল্প, প্রেমের গল্প। তবে প্রচলিতভাবে আমরা যেটা দেখি দেশে কোনো একটা বড় ধরনের সহিংসতার পর একটি সম্প্রদায়ের চলে যাওয়ার গল্প। কিন্তু দেশান্তরে বলা হয়েছে দেশকে ভালোবেসে ওই সম্প্রদায়ের থেকে যাওয়ার গল্প।

‘দেশান্তর’র অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঢাকাই সিনেমার নন্দিত অভিনেত্রী মৌসুমী। তাকে দেখা যাবে অন্নপূর্ণা চরিত্রে। তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল। আরো অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, শুভাশিস ভৌমিক, মোমেনা চৌধুরী, ইয়াশ রোহান, টাপুর।

শক্তিমান সব অভিনয়শিল্পীদের সিনেমাটিতে যুক্ত করার বিষয়ে নির্মাতা বলেন, গল্পে চরিত্রগুলো নিয়ে আমরা কাজ করতে চেয়েছি। খোঁজার চেষ্টা করেছি চরিত্রের সঙ্গে মানানসই অভিনয়শিল্পী। সেখান থেকে মনে হয়েছে, আহমেদ রুবেল কিংবা মৌসুমী ছাড়াও অনান্যদের মধ্যে চরিত্রের সবগুণ রয়েছে। তাদের মতো তারকাদের যুক্ত করার পরও রিহার্সাল করেই শুটিং করেছি। অবশেষে নির্মাণ শেষে সিনেমাটি মুক্তি দিতে যাচ্ছি। এতোটুকু বলব- ‘দেশান্তর’ পরিবার নিয়ে দেখার মতো একটি সিনেমা।

‘দেশান্তর’ সিনেমার গল্প যে সময়ের, সেই সময়ে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু সিনেমাটিতে বাল্য বিবাহ নিয়ে নেতিবাচক বার্তা উঠে আসবে না বলে জানান আশুতোষ সুজন। তার মতে, সিনেমাটি যখন দর্শকরা দেখা শুরু করবে তারা বুঝবে সিনেমার গল্প অনেক আগের। আর গল্পের কারণেই চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এই নির্মাতা জানান, সিনেমার সংলাপে নেত্রকোনার আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য নির্মলেন্দু গুণের উপন্যাসের পরও চিত্রনাট্য নিয়ে নিয়ে ডালিম কুমার ও নুরুল আলম আতিকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। আর অষ্টমগ্রাফটের পর গিয়ে চিত্রনাট্যটি সঠিক জায়গায় দাঁড়িয়েছে। অভিনয়শিল্পীদেরও ঠিকমতো ক্যামেরার সামনে সংলাপ উপস্থাপন করতে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। শুটিংয়ের আগে তারা তিন মাসব্যাপী ভাষার চর্চা ও লুক নিয়ে কাজ করছেন।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সিনেমা দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টিকে সিনেমার জোয়ার বলেই মনে করছেন আশুতোষ সুজন। সেই জোয়ারে গা ভাসিয়ে নিজের সিনেমা নিয়ে বেশ আশাবাদী এই নির্মাতা। তিনি বলেন, নিজের প্রথম সিনেমা নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। যারা টিভিতে আমার কাজ দেখেছেন তারা জানেন আমি ভিন্ন ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করি। সেই জায়গা থেকে এতটুকু বলতে পারি, সিনেমাটি দেখে কেউ নিরাশ হবেন না। আমি এমন একটি বিষয় দেখাতে চেয়েছি, যেটা আগে কেউ দেখাননি। আর এটি ফেস্টিভ্যালে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, আমি সিনেমাটি বানিয়েছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য।

আলোচিত ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্টে’ জুয়েল ফুফার চরিত্রে অভিনয় করছেন নির্মাতা আশুতোষ সুজন। অভিনয় না নির্মাতা কোনদিকে ক্যারিয়ারের ফোকাস দিতে চান? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই আমি অভিনয় করতাম।বর্তমানে ব্যাচেলর পয়েন্ট করার পর মানুষ কথা বলতে চায়, ছবি তুলতে চায়, উইশ করে- এটা বেশ ভালো লাগে। এক কথায় এটা দর্শকদের গণজোয়ারে ভেসে যাওয়া। তাদের ভালোবাসা উপভোগ করছি। দর্শক যতদিন পছন্দ করবে অভিনয় করব। কিন্তু নির্মাণটাই আমি বেশি উপভোগ করি। আমার মূল ফোকাস সিনেমা নির্মাণে।

Back to top button